গতকাল খেলা শুরুর মাত্র ২৫ সেকেন্ডের মাথায় ভারতকে পেনাল্টি উপহার দেয় বাংলাদেশ। পেনাল্টি থেকে গোলও হজম করে অতিথিরা। যদিও সে ধাক্কা সামলে দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়িয়ে এগিয়ে গেল দল। ভারত সমতা ফেরানোর পর ম্যাচ গেল অতিরিক্ত সময়ে। সেখানে পাত্তাই পেল না বাংলাদেশ। একের পর এক গোল হজম করে আবারও স্বপ্ন ভঙ্গের বিষাদে নীল হলো লাল সবুজের প্রতিনিধিরা। ভারতের ভুবনেশ্বরের কালিংগা স্টেডিয়ামে শুক্রবার অনুষ্ঠিত হওয়া ফাইনালে ভারতের বিপক্ষে ৫-২ গোলে হেরেছে বাংলাদেশ।
স্বাগতিকদের জয়ে ৪ গোল করেছেন গুরকিরাত সিং, অন্য গোলটি হিমাংশু জাংরার। খেলা শুরুর প্রথম মিনিটেই আক্রমণ শানায় ভারত। ডি বক্সের বেশ বাইরে থেকে হিমাংশুর জোরাল শট আটকালেও গ্লাভসে জমাতে পারেননি বাংলাদেশের গোলরক্ষক মোহাম্মদ আসিফ। আগলা বলের নিয়ন্ত্রণ নিতে ছুটে যান গুরকিরাত ও বাংলাদেশ গোলরক্ষক দুজনেই। আসিফের চার্জে গুরকিরাত পড়ে গেলে পেনাল্টি পায় ভারত। এই ফরোয়ার্ডই এগিয়ে নেন স্বাগতিকদের।
ম্যাচের একেবারে শুরুতেই গোল হজম করে গোলে খেই হারিয়ে ফেলা বাংলাদেশ প্রথম আক্রমণ করে দশম মিনিটে। কিন্তু রফিকুল ইসলামের শট দূরের পোস্টের বাইরে দিয়ে যায়। ৩১তম মিনিটে ব্যবধান বাড়ানোর ভালো সুযোগটি তৈরি করে ভারত। এবার গুরকিরাতের শট অল্পের জন্য ক্রসবারের উপর দিয়ে যায়। ৩৮তম মিনিটে ইমরানকে কাটিয়ে জায়গা করে নিয়ে জোরাল শট নেন হিমাংশু। আসিফ লাফিয়ে ফিস্ট করে ব্যবধান বাড়তে দেননি।
প্রথমার্ধের শেষ দিকে সমতায় ফিরে বাংলাদেশ। পায়ের কারিকুরিতে এক ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে বক্সে ঢুকে পড়েন রফিকুল। তার পাস প্রতিপক্ষের এক খেলোয়াড়ের পায়ে লেগে চলে যায় রাজনের সামনে। বুলেট গতির শটে জাল খুঁজে নেন তিনি। তিনটি পরিবর্তন এনে দ্বিতীয়ার্ধ শুরু করে বাংলাদেশ। মঈনুল ইসলাম মঈন, রাজন ও আক্কাস আলিকে তুলে জুম্মন হাসান নিঝুম, মিরাজুল ইসলাম ও মজিবর রহমান জনিকে নামান স্মলি। শুরুতে এগিয়ে যাওয়া গোলও পেয়ে যায় বাংলাদেশ।
মাঝমাঠ থেকে ইমরানের ফ্রি কিক এক ডিফেন্ডার ক্লিয়ার করলেও বিপদমুক্ত করতে পারেননি পুরোপুরি। বক্সেই বল পেয়ে যান শাহীন। প্রথম স্পর্শে বল একটু ফাঁকায় বের করে নিয়ে বাঁ পায়ের দারুণ শটে লক্ষ্যভেদ করেন এই ডিফেন্ডার। বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়ার আনন্দ উবে যায় ৫৯তম মিনিটে। বক্সের ঠিক উপর থেকে গুরকিরাতের বুলেট গতির শট জালে জড়ালে সমতায় ফিরে ভারত। পাঁচ মিনিট পর বক্সের ভেতরে হিমাংশু পা বাড়ালেও বলের নাগাল পাননি, ছুটে এসে বিপদমুক্ত করেন আসিফ।
খানিক পর ডিফেন্ডার শাহীনকে ছিটকে দিয়ে হিমাংশু শট নিয়েছিলেন। তেমন গতি না থাকলেও আটকাতে পারেননি আসিফ। তবে গোললাইনের একটু উপর থেকে ক্লিয়ার করেন আজিজুল হক অনন্ত। ৮৯তম মিনিটে ভিবিন মোহান্নার পাসে ব্রিজেশ গিরির ব্যাক হিল ঝাঁপিয়ে কোনোমতে আটকান আসিফ। ম্যাচ গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে এবং শুরুতে বাংলাদেশের রক্ষণের দেয়াল ধসিয়ে দেয় ভারত।
শুরুতেই সতীর্থের পাস ধরে আগুয়ান আসিফের পাশ দিয়ে নিখুঁত শটে লক্ষ্যভেদ করেন হিমাংশু। ৯৩তম মিনিটে সতীর্থের লং বল অফসাইডের ফাঁদ ভেঙে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে গোলরক্ষকে কাটিয়ে কোনাকুণি শটে হ্যাটট্রিক পূরণ করেন গুরকিরাত। ৯৮তম মিনিটে বক্সের বেশ বাইরে থেকে তার শট লাফিয়ে ওঠা আসিফের মাথার উপর দিয়ে জালে জড়ালে জয় অনেকটাই নিশ্চিত হয়ে যায় ভারতের। বয়সভিত্তিক এই প্রতিযোগিতার ছয় আসরের সবগুলো শিরোপাই জিতলো ভারত। দ্বিতীয়বারের মতো রানার্সআপ হয়েই সন্তষ্ট থাকতে হলো বাংলাদেশকে।